সম্ভাবনা

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - উচ্চতর গণিত - | NCTB BOOK

আমরা প্রতিনিয়ত ‘সম্ভাবনা' শব্দটি ব্যবহার করে থাকি। যেমন এবার এস.এস.সি. পরীক্ষায় যাদবের পাশ করার সম্ভাবনা খুব কম, এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা বেশি, আগামীকাল তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, আজ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম ইত্যাদি। অর্থাৎ কোনো ঘটনা ঘটার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা থাকলেই কেবল আমরা সম্ভাবনার কথা বলি। আর অনিশ্চয়তার মাত্রার উপরই ঘটনাটা ঘটার সম্ভাবনা কম বা বেশি হবে তা নির্ভর করে। কিন্তু কোনো সাংখ্যিক মান দিতে পারে না। এই অধ্যায়ে আমরা কোনো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনার সাংখ্যিক মান নির্ণয়ের বিভিন্ন সূত্র এবং নির্ণয় প্রণালী সম্পর্কে জানবো এবং নিশ্চিত ঘটনা, অসম্ভব ঘটনা ও সম্ভাব্য ঘটনা বর্ণনা করতে পারবো।

common.content_added_by

সম্ভাবনার সাথে জড়িত কিছু ধারণা

দৈব পরীক্ষা (Random Experiment) : যখন কোনো পরীক্ষার সম্ভাব্য সকল ফলাফল আগে থেকে জানা থাকে কিন্তু পরীক্ষাটিতে কোনো একটি নির্দিষ্ট চেষ্টায় কি ফলাফল আসবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না, একে দৈব পরীক্ষা বলে।

যেমন একটা মুদ্রা নিক্ষেপ পরীক্ষার সম্ভাব্য ফলাফল কি হবে, তা আমরা আগে থেকেই জানি কিন্তু মুদ্রাটি নিক্ষেপের পূর্বে কোন ফলাফলটি ঘটবে তা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না। সুতরাং মুদ্রা নিক্ষেপ পরীক্ষা একটা দৈব পরীক্ষা।

ঘটনা (Event): কোনো পরীক্ষার ফলাফল বা ফলাফলের সমাবেশকে ঘটনা বলে। উদাহরণস্বরূপ, একটা ছক্কা নিক্ষেপ পরীক্ষায় 3 পাওয়া একটি ঘটনা। আবার জোড় সংখ্যা পাওয়াও একটি ঘটনা।

সমসম্ভাব্য ঘটনাবলী (Equally Likely Events): যদি কোনো পরীক্ষার ঘটনাগুলো ঘটার সম্ভাবনা সমান হয় অর্থাৎ একটি অপরটির চেয়ে বেশি বা কম সম্ভাব্য না হয় তবে ঘটনাগুলোকে সমসম্ভাব্য বলে। যেমন একটা নিরপেক্ষ মুদ্রা নিক্ষেপে হেড বা টেল আসার সম্ভাবনা সমান। সুতরাং হেড আসা ও টেল আসা ঘটনা দুইটি সমসম্ভাব্য ঘটনা।

পরস্পর বিচ্ছিন্ন ঘটনাবলী (Mutually Exclusive Events): কোনো পরীক্ষায় যদি একটা ঘটনা ঘটলে অন্যটা অথবা অন্য ঘটনাগুলো না ঘটতে পারে তবে উক্ত ঘটনাগুলোকে পরস্পর বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে। যেমন, একটা নিরপেক্ষ মুদ্রা নিক্ষেপ করলে হেড আসা বা টেল আসা দুইটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কেননা হেড আসলে টেল আসতে পারে না। আবার টেল আসলে হেড আসতে পারে না। অর্থাৎ হেড ও টেল একসাথে আসতে পারে না।

অনুকূল ফলাফল (Favourable Outcomes ) : কোনো পরীক্ষায় একটা ঘটনার স্বপক্ষের ফলাফল হলো ঘটনার অনুকূল ফলাফল। একটি ছক্কা নিক্ষেপ করলে বিজোড় সংখ্যা হওয়ার অনুকূল ফলাফল 3 টি।

নমুনাক্ষেত্র (Sample Space) ও নমুনা বিন্দু (Sample Point) : কোনো দৈব পরীক্ষার সম্ভাব্য সকল ফলাফল নিয়ে গঠিত সেটকে নমুনাক্ষেত্র বলে। একটা মুদ্রা নিক্ষেপ করলে দুইটি সম্ভাব্য ফলাফল পাওয়া যায়, যথা হেড ও টেল। এখন S দ্বারা এ পরীক্ষণের ফলাফলের সেটকে সূচিত করলে আমরা লিখতে পারি S = {H,T}। সুতরাং উক্ত পরীক্ষার নমুনাক্ষেত্র, S {H,T}। মনে করা যাক দুইটি মুদ্রা = একসাথে নিক্ষেপ করা হলো। তাহলে নমুনাক্ষেত্রটি হবে S = {HH, HT, TH, TT}। নমুনাক্ষেত্রের প্রতিটি উপাদানকে ফলাফলের নমুনা বিন্দু বলে। একটা মুদ্রা একবার নিক্ষেপ পরীক্ষায় নমুনাক্ষেত্র S = {H,T} এবং এখানে H, T প্রত্যেকেই এক একটা নমুনা বিন্দু।

common.content_added_by

যুক্তিভিত্তিক সম্ভাবনা নির্ণয়

উদাহরণ ১. মনে করি একটা নিরপেক্ষ ছক্কা নিক্ষেপ করা হলো। 5 আসার সম্ভাবনা কত?

সমাধান: একটা ছক্কা নিক্ষেপ করলে সম্ভাব্য ফলাফলগুলো হচ্ছে: 1, 2, 3, 4, 5, 6। ছক্কাটি নিরপেক্ষ
হলে ফলাফলগুলো সমসম্ভাব্য হবে। অর্থাৎ যেকোনো ফলাফল আসার সম্ভাবনা সমান। অতএব যেকোনো 1 একটা ফলাফল আসার সম্ভাবনা ছয়ভাগের একভাগ। সুতরাং 5 আসার সম্ভাবনা । আমরা এটাকে P(5) =16এভাবে লিখি ।

উদাহরণ ২. একটা নিরপেক্ষ ছক্কা নিক্ষেপে জোড় সংখ্যা আসার সম্ভাবনা কত?

সমাধান: ছক্কা নিক্ষেপে সম্ভাব্য ফলাফলগুলো হচ্ছে 1, 2, 3, 4, 5, 6। এদের মধ্যে 2, 4, 6 এই 3 টি জোড় সংখ্যা। এই তিনটির যেকোনো একটা আসলে জোড় সংখ্যা হবে অর্থাৎ জোড় সংখ্যার অনুকূল ফলাফল 3 টা। যেহেতু ফলাফলগুলো সমসম্ভাব্য, তাই জোড় সংখ্যা আসার সম্ভাবনা হবে 36.

                                                                                           

                                                                                                                     P (জোড়সংখ্যা) =36=12

তাহলে সম্ভাবনাকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় ,কোনো ঘটনার সম্ভাবনা = উক্ত ঘটনার অনুকূল ফলাফল / সমগ্র সম্ভাব্য ফলাফল

কোনো পরীক্ষণে কোনো ঘটনা ঘটার অনুকূল ফলাফল সর্বনিম্ন শূন্য এবং সর্বোচ্চ n (সমগ্র সম্ভাব্য ঘটনাবলী) হতে পারে। যখন কোনো ঘটনার অনুকূল ফলাফলের মান শূন্য হয় তখন সম্ভাবনার মান শূন্য হয়। আর যখন অনুকূল ফলাফলের মান n হয়, তখন সম্ভাবনার মান 1 হয়। এ কারণে সম্ভাবনার মান 0 হতে 1 এর মধ্যে থাকে . তাই  0p1

 

common.content_added_by

দুইটি বিশেষ ধরনের ঘটনা

নিশ্চিত ঘটনা: কোনো পরীক্ষায় যে ঘটনা অবশ্যই ঘটবে একে নিশ্চিত ঘটনা বলে। নিশ্চিত ঘটনার ক্ষেত্রে সম্ভাবনার মান 1 হয়। যেমন, আগামীকাল সূর্য পূর্ব দিকে উঠার সম্ভাবনা 1, আজ সূর্য পশ্চিম দিকে অস্ত যাবে এর সম্ভাবনাও 1। রাতের বেলায় সূর্য দেখা যাবে না, এর সম্ভাবনা 1। একটা মুদ্রা নিক্ষেপ পরীক্ষায় H অথবা T আসার সম্ভাবনাও 1। একটা ছক্কা নিক্ষেপ পরীক্ষায় জোড় অথবা বিজোড় সংখ্যা আসার সম্ভাবনাও 1। এগুলোর প্রত্যেকেই নিশ্চিত ঘটনা।

অসম্ভব ঘটনা : কোনো পরীক্ষায় যে ঘটনা কখনো ঘটবে না অর্থাৎ ঘটতে পারে না একে অসম্ভব ঘটনা বলে। অসম্ভব ঘটনার সম্ভাবনা সব সময় শূন্য হয়। যেমন আগামীকাল সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠবে অথবা পূর্বদিকে অস্ত যাবে এর সম্ভাবনা শূন্য। তেমনি রাত্রে সূর্য দেখা যাবে এর সম্ভাবনাও শূন্য। আবার একটা ছক্কা নিক্ষেপে 7 আসার সম্ভাবনাও শূন্য। এখানে প্রত্যেকটি ঘটনাই অসম্ভব ঘটনা।

common.content_added_and_updated_by

তথ্যভিত্তিক সম্ভাবনা নির্ণয়

যুক্তিভিত্তিক সম্ভাবনা নির্ণয়ে ফলাফলগুলো সমসম্ভাব্য হতে হয়। বাস্তবে সকল ক্ষেত্রে ফলাফলগুলো সমসম্ভাব্য হয় না। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে সম্ভাবনার যুক্তিভিত্তিক সংজ্ঞার মত কিছু গণনা করা যায় না। যেমন আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে আজ বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা 30%, বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্রাজিলের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা 40%, এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা 60%। এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় অতীতের পরিসংখ্যান হতে এবং এটাই হচ্ছে তথ্যভিত্তিক সম্ভাবনার ধারণা।

ধরা যাক, একটা মুদ্রা 1000 বার নিক্ষেপ করায় 523 বার হেড পাওয়া গেল।

এ ক্ষেত্রে হেডের আপেক্ষিক গণসংখ্য5231000=0.523। এখান থেকে বুঝা যায় যে, পরীক্ষাটি ক্রমাগত চালিয়ে গেলে (পরীক্ষাটি যতবেশি বার করা যাবে) আপেক্ষিক গণসংখ্যার মানটি এমন একটি সংখ্যার কাছাকাছি হবে যাকে মুদ্রাটি একবার নিক্ষেপ করলে হেড আসার সম্ভাবনা হবে। একেই তথ্যভিত্তিক সম্ভাবনা বলা হয়।

 

common.content_added_and_updated_by

নমুনাক্ষেত্র এবং Probability Tree দ্বারা সম্ভাবনা নির্ণয়

আগেই বলা হয়েছে, কোনো পরীক্ষায় সম্ভাব্য ফলাফলগুলো নিয়ে যে ক্ষেত্র তৈরি হয় তাকে নমুনাক্ষেত্ৰ বলে। অনেক পরীক্ষায় নমুনাক্ষেত্রের আকার বেশ বড় হয়। এসব ক্ষেত্রে নমুনা বিন্দু গণনা করা ও নমুনাক্ষেত্র তৈরি করা সময় সাপেক্ষ এমন কি ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। সেক্ষেত্রে আমরা probability tree এর সাহায্যে নমুনাক্ষেত্র তৈরি করতে পারি ও বিভিন্ন ঘটনার সম্ভাবনাও বের করতে পারি।

উদাহরণ: মনে করি, দুইটি নিরপেক্ষ মুদ্রা একসাথে একবার নিক্ষেপ করা হলো। নমুনাক্ষেত্রটি তৈরি কর। প্রথম মুদ্রায় H এবং দ্বিতীয় মুদ্রায় T আসার সম্ভাবনা নির্ণয় কর।

সমাধান: দুইটি মুদ্রা নিক্ষেপ পরীক্ষাকে দুই ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। প্রথম ধাপে একটা মুদ্রা নিক্ষেপে 2 টি ফলাফল H অথবা T আসতে পারে। দ্বিতীয় ধাপে অপর মুদ্রা নিক্ষেপেও 2 টি ফলাফল H অথবা T আসতে পারে। পরীক্ষার মোট ফলাফলকে সম্ভাব্য নমুনা বিন্দুগুলো HH, HT, TH, TT । তাহলে নমুনাক্ষেত্রটি হবে {HH, HT, TH, TT} । এখানে নমুনা বিন্দুর সংখ্যা 4 এবং প্রতিটি নমুনা বিন্দুর আসার সম্ভাবনা একই । তাই প্রথম মুদ্রায় H ও দ্বিতীয় মুদ্রায় T আসার সম্ভাবনা হবে, P(HT) =1/4.

common.content_added_and_updated_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion